প্রকাশের তারিখ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫
পর্যটকে মুখর কুয়াকাটা, হোটেল-মোটেলগুলোতে শতভাগ বুকিং
ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও উৎসবের আমেজে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সম্পন্ন হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা। বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। দেবীর বিদায়ের পরও উৎসবের আবহ কাটেনি এই সমুদ্রসৈকত শহরে। পূজার সমাপ্তির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার ও শনিবার মিলিত হয়ে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় নেমেছে পর্যটকের ঢল।দেশের অন্যতম সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলগুলোতে এখন প্রায় শতভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। সৈকতজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ।শারদীয় দুর্গাপূজা ও ছুটির মিলিত উৎসবের তৃতীয় দিন শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকাল থেকেই কুয়াকাটার ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতসহ আশপাশের দর্শনীয় স্থানে ভিড় করছেন হাজারো পর্যটক। কুয়াকাটার কুয়া, তিন নদীর মোহনা, লেম্বুর বন, শুটকি পল্লী, ঝাউবাগান, গঙ্গামতি, চর গঙ্গামতি ও লাল কাঁকড়ার চরসহ জনপ্রিয় পর্যটনস্পটে এখন পর্যটকে কানায় কানায় পূর্ণ। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সার্বক্ষণিক তৎপরতা রয়েছেন।সরেজমিনে দেখা গেছে, আগত পর্যটকরা সৈকতের বালিয়াড়িতে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন। কেউ ঢেউয়ের সঙ্গে খেলছেন, কেউ ওয়াটার বাইকে চড়ে উপভোগ করছেন রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। অনেক পর্যটককে মোটরসাইকেল কিংবা ঘোড়ায় চড়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে দেখা গেছে। কেউ আবার সৈকতের বেঞ্চিতে বসে প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্যে হারিয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে কুয়াকাটা এখন যেন এক উৎসবের শহরে রূপ নিয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন দা বলেন, “সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও কুয়াকাটায় এখনো উৎসবের আবহ বিরাজ করছে।”স্থানীয় পর্যটক জসিম বলেন, “এবার কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। সৈকতের প্রতিটি জায়গায় এখন মানুষের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন,পর্যটক-রাও পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসে দারুণ সময় কাটাচ্ছে।”স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, পূজা ও ছুটিকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আগমনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে এসেছে প্রাণ।মীম রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী মো. কাউসার বলেন, “এবারের ছুটিতে পর্যটকের সংখ্যা আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রেস্তোরাঁয় ক্রেতাদের ভিড় লেগেই আছে। পর্যটকদের সেবা দিতে আমাদের কর্মচারীদের নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে হচ্ছে।”সরেজমিনে দেখা গেছে, সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া ‘ভোজন বিলাস হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’-এও প্রথম দিন থেকেই অপ্রত্যাশিত ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। উদ্বোধনের পরদিন থেকেই খাবার পরিবেশন শুরু হলে সেখানে পর্যটকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। হোটেল মালিকরা পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।রংধনু কসমেটিক্সের স্বত্বাধিকারী মো. রহমান দেওয়ান বলেন, “টানা ছুটি ও দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটায় বিপুল সংখ্যক পর্যটক ভিড় করেছেন। তার প্রভাব পড়েছে আমাদের ব্যবসায়েও। আগের তুলনায় বিক্রি অনেক বেড়েছে। সারাদিন দোকানে ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকে। এ ধরনের পর্যটকের আগমন কেবল ব্যবসায়ীদের জন্য নয়, পুরো এলাকার অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক বার্তা বহন করে।”স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটকের এমন উপস্থিতি দীর্ঘদিন পর দেখা যাচ্ছে। এতে করে কুয়াকাটার পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।অনলাইনে আগাম বুকিং না করায় কুয়াকাটায় এসে বিপাকে পড়েছেন বরগুনা থেকে আসা পর্যটক সুমাইয়া তিনি বলেন, “যেই হোটেল ভাড়া ছিলো ১৫০০ টাকা সেই হোটেল ভাড়া এখন নিচ্ছে ২ হাজার টাকা যা অপ্রত্যাশিত” তবে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে একটু দূরে বাজেট অনুযায়ী হোটেল পেয়ে স্বস্তিতে তিনি।হোটেল মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল ফরাজী বলেন, “দুর্গাপূজার টানা ছুটিতে কুয়াকাটায় রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এসেছেন। সৈকতসংলগ্ন হোটেলগুলো শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। আশপাশের হোটেলগুলোরও ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকড। গতকাল (২ অক্টোবর) বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছু বুকিং বাতিল হলেও আজ সব কক্ষ পূর্ণ। সৈকতের কাছাকাছি খালি কক্ষ পাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব।”দেশের ‘সাগরকন্যা’ খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, যেখানে একইসাথে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়, সেখানে এখন হাজারো পর্যটকের পদচারণায় সরগরম। শারদীয় দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটির মিলিত আনন্দে পর্যটকের আগমনে প্রাণ ফিরে পেয়েছে কুয়াকাটার পর্যটন খাত এবং স্থানীয় অর্থনীতি।
কপিরাইট © ২০২৫ চ্যানেল এ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত