নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের জেরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দেশজুড়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। সহিংসতায় অন্তত ২০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা নামানো হয়েছে এবং দেশজুড়ে কারফিউ জারি আছে।রাজধানী কাঠমান্ডুর অস্থিরতা অনেককেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে গত বছরের বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংকটকে। ভারতের জন্য বিষয়টি বিশেষভাবে চিন্তার কারণ, কারণ নেপালের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্ত আছে, যা ভারতের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেপালের সহিংসতায় হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, “এত তরুণ প্রাণহানি হৃদয়বিদারক। নেপালের স্থিতিশীলতা ও শান্তি অত্যন্ত জরুরি।” এ নিয়ে তিনি মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকও করেছেন।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শ্রীলঙ্কার মতো হঠাৎ করে নেপালের পরিস্থিতি অবনতি ভারতের জন্য বড় ধাক্কা। কারণ চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক অঞ্চল নেপালের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থান করছে। পাশাপাশি প্রায় ৩৫ লাখ নেপালি ভারতে বসবাস বা কাজ করেন, আর ৩২ হাজার গুর্খা সেনা ভারতীয় বাহিনীতে কর্মরত।নেপালের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্কও গভীর—বার্ষিক লেনদেন প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার। খাদ্য ও জ্বালানির জন্য কাঠমান্ডু মূলত ভারতের ওপর নির্ভরশীল। একইসঙ্গে নেপাল ভারতের হিন্দু তীর্থযাত্রীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য।রাজনৈতিক সংকটে বিক্ষোভকারীরা নেপালের তিন প্রধান দলকেই অভিযুক্ত করছে। এর মধ্যে চীন ও ভারতের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে জনমনে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতকে নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষাবৃত্তি ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পাশে টানতে হবে।দক্ষিণ এশিয়ায় সার্ক কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ায় ভারতের জন্য এই অস্থিরতা মোকাবিলা আরও কঠিন হয়ে উঠছে। প্রতিবেশী বাংলাদেশে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন পরিস্থিতিকে জটিল করছে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহতার ভাষায়, “ভারত বড় শক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জনের আগে নিজস্ব প্রতিবেশে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই সবচেয়ে জরুরি।”