শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
চ্যানেল এ

ছোট গল্প: শেওলা



ছোট গল্প: শেওলা

বিকেল নামছে। আলো হারাতে হারাতে বারান্দার কোণটা যেন আরও একা হয়ে উঠেছে।

সেই কোণেই বসে আছে ফাতেমা— দুপুরের খাবারটা ঠান্ডা, মনটা তারও।

একটু দূরে চুপচাপ এসে বসলেন রিয়াদ দাদু।

তার কণ্ঠে কোন তাড়া নেই, যেন সময়কেই থামিয়ে বসে আছেন তিনি।

— “এই যে, ছোট পাখিটা একা কুণ্ডলি পাকিয়ে বসে আছে কেন?”

কণ্ঠে একরকম ছায়া মাখানো স্নেহ।

ফাতেমা মুখ ঘুরিয়ে বলে—

— “ভালো লাগে না দাদু… কারো হাসি, কারো গল্প, কিছুই না।”

রিয়াদ একটু চুপ করে থাকেন। তারপর হালকা হাসেন।

এই হেসে ওঠা—শুধু ঠোঁটের কাজ, চোখের নয়।

— “তুই  নিমুর নাম শুনেছিস?”

ফাতেমার চোখ ওঠে।

— “রোশনি ফুফি? সেই যে তুমি বলেছিলে, তোমার ক্লাসমেট?”

— “হ্যাঁ, বান্ধবী ছিল, অথচ সম্পর্কটা ছিল রক্তহীন আত্মীয়তার মতো।

যেন রক্ত না মিশলেও হৃদপিণ্ড একটাই ছিল।”

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস...

— “ও ছিল নরম গলায় উচ্চারণ করা এক মেয়ের নাম—

যার চেহারায় সরলতা, কিন্তু চোখে ছিল শব্দহীন অভিমান।

আমরা একসাথে পড়তাম।

সেই প্রথম সেমিস্টারে রোশনি টপ করেছিল।”

রিয়াদ থামেন একটু। তারপর আবার বলেন—

— “সেদিন কলেজে করতালির শব্দ উঠেছিল,

আর ওর বুকের ভেতর উঠেছিল এক নিঃশব্দ দহন।

ও টপার হয়েছিল, আর সবার আগে ওর বাবাকে জানাতে চেয়েছিল—

যে মানুষটা প্রতিদিন বলত, ‘তুই একদিন শীর্ষে উঠবি।’

আজ সত্যি উঠে গেছিল সে।

কিন্তু… ফোন নম্বরটা তখন মৃত।

একটা ব্যস্ত টোন নেই, নেই কোনো রিংও।

শুধু বাতাসে ভেসে থাকা এক অপূর্ণতা।”

ফাতেমা কিছু না বলে তাকিয়ে ছিল।

তার চোখে অদ্ভুত কিছু ভাসছে—জানি না, জল না গল্প।

— “রোশনি বাড়ি ফিরে সার্টিফিকেটটা বাবার ছবি রেখে দেয়।

বলেও না কিছু…

তবে তার চোখে একটা রোদ্দুর ছিল—যেটা সেদিন ডুবে যায়।”

— “তুই জানিস, শেওলা কী?”

রিয়াদ হঠাৎ প্রশ্ন করে।

— “ওই তো, জলে জন্মায়… সবুজ… নরম…”

ফাতেমা জবাব দেয়।

— “হ্যাঁ, আর নিঃশব্দে পচে।

যেমন রোশনি।

ও এখনো বেঁচে আছে, হাসে…

কিন্তু সেই হাসির ভেতর খাঁচাবন্দী এক কান্না থাকে—

যেটা বাইরে আসে না, শুধু ভেতর পুড়ে যায়।”

ফাতেমা আস্তে বলে—

— “বুঝলাম… কিন্তু?”

একটু থেমে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে—

— “না… থাক… পরে শুনবো।”

তারপর ধীরে বলে—

— “আচ্ছা… দাদুভাই… রোশনি ফুফির কি হলো?”

রিয়াদ এবার চোখ তুলে তাকান না।

শুধু নিচু গলায় বলে ওঠেন—

“নিমুর? ওর অবস্থা এক লাইনে বলি—

সে এখন আর চোখের জলে কাঁদে না—

সে নিঃশব্দে পুড়ে যায়, যেন আগুনও শব্দ পেতে লজ্জা পায়।”

আপনার মতামত লিখুন

চ্যানেল এ

শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫


ছোট গল্প: শেওলা

প্রকাশের তারিখ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫

featured Image

বিকেল নামছে। আলো হারাতে হারাতে বারান্দার কোণটা যেন আরও একা হয়ে উঠেছে।

সেই কোণেই বসে আছে ফাতেমা— দুপুরের খাবারটা ঠান্ডা, মনটা তারও।

একটু দূরে চুপচাপ এসে বসলেন রিয়াদ দাদু।

তার কণ্ঠে কোন তাড়া নেই, যেন সময়কেই থামিয়ে বসে আছেন তিনি।

— “এই যে, ছোট পাখিটা একা কুণ্ডলি পাকিয়ে বসে আছে কেন?”

কণ্ঠে একরকম ছায়া মাখানো স্নেহ।

ফাতেমা মুখ ঘুরিয়ে বলে—

— “ভালো লাগে না দাদু… কারো হাসি, কারো গল্প, কিছুই না।”

রিয়াদ একটু চুপ করে থাকেন। তারপর হালকা হাসেন।

এই হেসে ওঠা—শুধু ঠোঁটের কাজ, চোখের নয়।

— “তুই  নিমুর নাম শুনেছিস?”

ফাতেমার চোখ ওঠে।

— “রোশনি ফুফি? সেই যে তুমি বলেছিলে, তোমার ক্লাসমেট?”

— “হ্যাঁ, বান্ধবী ছিল, অথচ সম্পর্কটা ছিল রক্তহীন আত্মীয়তার মতো।

যেন রক্ত না মিশলেও হৃদপিণ্ড একটাই ছিল।”

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস...

— “ও ছিল নরম গলায় উচ্চারণ করা এক মেয়ের নাম—

যার চেহারায় সরলতা, কিন্তু চোখে ছিল শব্দহীন অভিমান।

আমরা একসাথে পড়তাম।

সেই প্রথম সেমিস্টারে রোশনি টপ করেছিল।”

রিয়াদ থামেন একটু। তারপর আবার বলেন—

— “সেদিন কলেজে করতালির শব্দ উঠেছিল,

আর ওর বুকের ভেতর উঠেছিল এক নিঃশব্দ দহন।

ও টপার হয়েছিল, আর সবার আগে ওর বাবাকে জানাতে চেয়েছিল—

যে মানুষটা প্রতিদিন বলত, ‘তুই একদিন শীর্ষে উঠবি।’

আজ সত্যি উঠে গেছিল সে।

কিন্তু… ফোন নম্বরটা তখন মৃত।

একটা ব্যস্ত টোন নেই, নেই কোনো রিংও।

শুধু বাতাসে ভেসে থাকা এক অপূর্ণতা।”

ফাতেমা কিছু না বলে তাকিয়ে ছিল।

তার চোখে অদ্ভুত কিছু ভাসছে—জানি না, জল না গল্প।

— “রোশনি বাড়ি ফিরে সার্টিফিকেটটা বাবার ছবি রেখে দেয়।

বলেও না কিছু…

তবে তার চোখে একটা রোদ্দুর ছিল—যেটা সেদিন ডুবে যায়।”

— “তুই জানিস, শেওলা কী?”

রিয়াদ হঠাৎ প্রশ্ন করে।

— “ওই তো, জলে জন্মায়… সবুজ… নরম…”

ফাতেমা জবাব দেয়।

— “হ্যাঁ, আর নিঃশব্দে পচে।

যেমন রোশনি।

ও এখনো বেঁচে আছে, হাসে…

কিন্তু সেই হাসির ভেতর খাঁচাবন্দী এক কান্না থাকে—

যেটা বাইরে আসে না, শুধু ভেতর পুড়ে যায়।”

ফাতেমা আস্তে বলে—

— “বুঝলাম… কিন্তু?”

একটু থেমে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে—

— “না… থাক… পরে শুনবো।”

তারপর ধীরে বলে—

— “আচ্ছা… দাদুভাই… রোশনি ফুফির কি হলো?”

রিয়াদ এবার চোখ তুলে তাকান না।

শুধু নিচু গলায় বলে ওঠেন—

“নিমুর? ওর অবস্থা এক লাইনে বলি—

সে এখন আর চোখের জলে কাঁদে না—

সে নিঃশব্দে পুড়ে যায়, যেন আগুনও শব্দ পেতে লজ্জা পায়।”


চ্যানেল এ

মোবাইল নাম্বারঃ +8801602460060

Email: hr.channela@gmail.com
বিজ্ঞাপনঃ +8801602460060
info@channelabd.com


কপিরাইট © ২০২৫ চ্যানেল এ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত